গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গোটা এলাকায় বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও সামগ্রী বিতরণও শুরু হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত।
আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দ্বিতীয়বারের মতো এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দলীয় প্রতীকে এই সিটিতে নির্বাচন এই প্রথম। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সারাদেশের মানুষ।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি এলাকায় প্রায় ১২ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। জেলার শহীদ বরকত স্টেডিয়াম ও শহীদ উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে জমায়েত করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এখান থেকেই নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করার জন্য তাদের পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন নির্বাচনি কেন্দ্রে।
এদিকে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম ও সামগ্রী এরই মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে গাজীপুরে। নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রাখা হয়েছে এসব সরঞ্জাম। সোমবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে এসব সরঞ্জাম বিভিন্ন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতে শুরু করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল। তারা এগুলো নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ কেন্দ্রে।
জানতে চাইলে রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে আসতে গিয়ে ভোটারদের যেন কোনো বাধার মুখে না পড়তে হয়, সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো নিয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘৪৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই গাজীপুরে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বেশকিছু অভিযোগ উত্থাপন করলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
উল্লেখ্য, পূর্বঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর পুরোদমে চলছিল প্রস্তুতি। প্রার্থীরাও ছিলেন মাঠে। এর মধ্যে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ হাইকোর্টে রিট করেন। রিট শুনানি শেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানি শেষে গত ১০ মে হাইকোর্টের দেওয়া ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করেন আপিল বিভাগ। এ সময় এই নির্বাচনের জন্য ২৮ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আদালত। আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী ২৬ জুন এই নির্বাচনের নতুন দিন ঠিক করে নির্বাচন কমিশন।
গাজীপুর-১, ২ ও ৩ সংসদীয় আসনের কিছু অংশ নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা গঠিত। এই সিটি করপোরেশনের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭টি, মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন।